কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলায় চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের এনজিও কর্মকর্তার দাবিকৃত ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দাতা সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশের একটি প্রকল্পে চাকুরী হয়নি নও মুসলিম এক দরিদ্র তরুনীর। এ ঘটনায় পুরো পেকুয়াজুড়ে ওই এনজিওর ভুমিকা নিয়ে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত এনজিও কর্মকর্তার নাম কফিল উদ্দিন। তিনি এনজিও শেড এর পেকুয়ার কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত। তার বাড়ি টেকনাফ উপজেলায়।
ভুক্তভোগী নও মুসলিম তরুনীর নাম শামিমা আকতার পিংকি। সে গত ২/৩ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ কারো বিনা প্ররোচনায় স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলিম এক যুবককে বিয়ে করে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাইম্যাখালী গ্রামে অতিকষ্টে বসবাস করে আসছেন।
ভূক্তভোগী নও মুসলিম তরুনী শামিমা আকতার পিংকি অভিযোগ করেছেন, পেকুয়া উপজেলায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের অর্থায়নে এনজিও সংস্থা শেড কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করেই গোপনে পেকুয়ার ৬টি ইউনিয়নের জন্য ভলান্টিয়ার পদে লোক নিয়োগের গত ১২ সেপ্টেম্বর তাদের পেকুয়া প্রকল্প অফিসে পছন্দের প্রার্থীদের ডেকে এনে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়। তিনি খবর পেয়ে এনজিও শেড এর পেকুয়া প্রকল্প অফিসে গিয়ে কাগজপত্র জমা প্রদান করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। উক্ত পরীক্ষায় মোট ২২ জন প্রার্থী অংশ নেন। ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে ফোন করে পেকুয়া শেড অফিসে চাকুুরীতে যোগদান করার জন্য বলা হয়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর এনজিও শেড এর পেকুয়া অফিসে তিনি চাকুরীতে যোগদানের হাজির হলে এনজিও কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন তার কাছ থেকে ঘুষ দাবি করেন। তিনি এসময় ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে শেড এর কর্মকর্তা কফিল উদ্দিন কাগজপত্র সঠিক নেই মর্মে তাকে আর নিয়োগ দেয়নি। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবাদ করলে এনজিও কর্মকর্তা কফিল তাকে চড় থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানির চেষ্টায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়।
অভিযোগের ব্যাপারে এনজিও শেড এর পেকুয়ার কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অফিসার কফিল উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের এনজিও সোসাইটি ফর হেলথ এক্সটেনশন এন্ড ডেভলেপমেন্ট (শেড) পেকুয়া উপজেলায় গত ৭ আগস্ট থেকে ২০২৩ ইংরেজী পর্যন্ত দাতা সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশ এর অর্থায়নে উপজেলারর ৬ ইউনিয়নের স্থানীয় জনগোষ্টীদের নিয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে পুরোটাই অর্থায়ন করছে দেশের সুনামধন্য দাতা সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশ। কিন্তু ইউনিসেফের অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই নানা অনিয়ম ও দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এনজিও শেড। পেকুয়া উপজেলায় গত ৭ আগস্ট থেকে কাগজে কলমে প্রকল্প শুরু করার কথা বলা হলেও মূলত এনজিওটি প্রকল্পের কাজ শুরু সেপ্টেম্বর মাস থেকে।
জানা যায়, পেকুয়া উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এনজিও শেড জনবল নিয়োগের জন্য স্থানীয় পত্রিকা ও এনজিওটির ওয়েব সাইটে কোন প্রকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি। এনজিওরটি কতৃকপক্ষ স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তার নিজের উপজেলা টেকনাফ থেকে কফিল উদ্দিন নামের এক লোককে পেকুয়ায় কমিউনিটি এনগেজমেন্ট অফিসার পদে নিয়োগ দেয়। এরপর কফিল উদ্দিন পেকুয়ায় এসে পেকুয়া থানা সড়কের ইদ্রিস মিয়ার বাসায় এনজিও শেড এর জন্য প্রকল্প অফিস ভাড়া নেন। পেকুয়ার ৬ ইউনিয়নে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়ার জন্য এনজিওটি কোন প্রকার বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। টেকনাফের বাসিন্দা কফিল উদ্দিন অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর তার কার্যালয়ে একটি সাজানো নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন। আর সেখান থেকে তার পছন্দমতো প্রার্থী নিয়োগ প্রদান করেন।
পাঠকের মতামত